বাংলাদেশের দার্জিলিং নীলগিরি , বান্দরবন

নীলগিরি , বান্দরবন

নীলগিরি ঃ
হাত দিয়ে মেঘ ছোয়ার স্বপ্ন অনেকেরই হয়ত আছে । তাই আর স্বপ্ন না দেখে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে ঘুরে আসুন বাংলাদেশের দার্জিলিং নীলগিরিতে ।  বান্দরবান জেলা সদর থেকে প্রায় ৫২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বান্দরবান-থানছি সড়কে পাহাড় চূড়ায় নীলগিরি পর্যটন কেন্দ অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দুই হাজার ২০০ ফুট উচ্চতায় এই পর্যটন কেন্দ্রটি অবস্থিত। এই জায়গা থেকে পর্যটকরা সহজেই মেঘ ছুঁতে পারেন বলে একে বাংলাদেশের দার্জিলিংও বলা হয়। নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে যে দিকে চোখ যায় শুধুই সবুজ আর সবুজ। চারপাশে সবুজের সমারোহ আর নির্জন প্রকৃতি নীলগিরির অন্যতম আকর্ষণ।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্যাটালিয়ন কর্তৃক চিম্বুক-থানচি সড়কটি নির্মাণের সময় ম্রো জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত বান্দরবান থানিছ সড়কের কাপ্রু পাড়া এলাকায় প্রথমে নিরাপত্তা চৌকি হিসেবে এটি নিমিত হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের পরিকল্পনায় এটি একটি পর্যটন কেন্দ্রের পূর্ণতা লাভ করে। এখানে মেঘদূত, আকাশনীলা, নীলাঙ্গনা, মারমা হাউজসহ নানা নামের আকর্ষণীয় কটেজ রয়েছে। আছে একটি ক্যাফেটেরিয়া। বর্তমানে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা প্রতিদিনই নীলগিরি ভ্রমণে আসছেন।
নীলগিরি , বান্দরবন

দিনের বেলায় এই স্থান থেকে খালি চোখে বঙ্গোপসাগর ও জাহাজ চলাচলের দৃশ্য দেখা যায়। যা পর্যটকদের খুব সহজেই আকৃষ্ট করে। এছাড়া ছোট ছোট পাহাড়ের কোল ঘেষে বয়ে যাওয়া সাঙ্গু নদীর আকাবাকা দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য সকলকে আকর্ষণ করে। আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত এই নীলিগিরি রিসোর্টে অবস্থান ও রাত্রিযাপনের জন্য সেনাবাহিনীর বান্দরবান ব্রিগেড হেডকোয়াটার এর সাথে আগাম যোগাযোগ করতে হয়। প্রকৃতির অপরুপ মনমুগ্ধকর নয়নাভিরাম এই দৃশ্যগুলো পর্যটকদের স্মৃতিতে ধরে রাখার জন্য নীলগিরি রিসোর্ট অত্যন্ত চমকার একটি স্থান।

আকাশের খুব কাছে নীলগিরি:
আকাশ ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছা পূরণ করতে চাইলে যেতে হবে নীলগিরি। নীলগিরি পাহাড়ের চূড়ায় উঠলে আকাশ নিজে এসে ধরা দেবে আপনার হাতে। মাথার উপর নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা খেলা করে নীলগিরি পাহাড়ে। অপরূপ সৌন্দর্য্যের এক নীলাভূমি এই নীলগিরি। নীলগিরির কারণে বান্দরবানকে বাংলাদেশের দার্জিলিং বলা হয়। শীতকাল এবং বর্ষাকাল দুই ঋতুতেই এইখানে ভ্রমণে অনেক বেশি আনন্দ। তবে বর্ষাকালে ভ্রমণে গেলে বেশি আন্দন পাওয়া যায়। কারণ এই সময়ে মেঘের অপরূপ নৃত্য দেখতে দেখতেই দিন বয়ে যায়।
নীলগিরি , বান্দরবন

দুর্গম পাহাড়ে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রে গড়ে তোলা হয়েছে আকাশনীলা, মেঘদূত, নীলাতানা নামে পর্যটকদের জন্য সকল সুবিধা সম্বলিত তিনটি কটেজ। কটেজগুলো রাত্রি যাপনের জন্য ভাড়া পাওয়া যায় এক হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকার মধ্যে। এখানে রয়েছে অত্যাধুনিক একটি রেস্টুরেন্টও। পাহাড়ি পথ পেরিয়ে নীলগিরিতে পৌঁছেই রেস্টুরেন্টে পেট পুরে খাওয়া যায়।
নীলগিরি যেন প্রকৃতির এক অনন্য দান। নীলগিরির চূড়া থেকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাহাড় কেওক্রাডং, প্রাকৃতিক আশ্চর্য বগালেক, কক্সবাজারের সমুদ্র, চট্টগ্রাম সমদ্র বন্দরের আলো-আঁধারি বাতি এবং চোখ জুড়ানো পাহাড়ের সারিও দেখতে পাওয়া যায়।
নীলগিরির কাছাকাছি রয়েছে বেশ কয়েকটি ম্রো উপজাতীয় গ্রাম। নীলগিরির একদম কাছে কাপ্রু পাড়া, আপনি সহজেই পরিদর্শন করে ম্রো আদিবাসী সম্পর্কে জানতে পারবেন। নীলগিরিতে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি ক্যাম্প। ফলে এখানে নিরাপত্তার কোন ঘাটতি নেই। আপনার যে কোন প্রয়োজনে সেনা সদস্যরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে।

নীলগিরির রাতের সৌন্দর্য আরো হতবাক করে। চারিদিকের হরিণ, শিয়ালসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণীর ডাক আর পাহাড়গুলোর আলো-আঁধারির খেলা দেখে আপনার জীবনকেই যেন রহস্যময় বলে মনে হবে। যারা এডভেঞ্চার পছন্দ করেন তাদের জন্য রাতের নীলগিরি হতে পারে উৎকৃষ্ট স্থান। নীলগিরি যাওয়ার পথে আপনি দেখে যেতে পারেন বান্দরবানের অপার সৌন্দর্যময় শৈলপ্রপাত। এখানে আদিবাসী বম তরুণীরা আপনাকে স্বাগত জানাবে। এখান থেকে কিনে নিতে পারেন আদিবাসীদের হাতের তৈরি নানা পণ্য। এর পরই চোখে পড়বে স্বপ্নচূড়া। স্বপ্নচূড়া থেকেও বান্দরবানের অবাক করা সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

স্বপ্নচূড়ার পরই চিম্বুকে পৌঁছে যাবেন আপনি। চিম্বুকের সুনাম সারা দেশব্যাপী। এখানে রয়েছে টি এন্ড টির বিশাল টাওয়ার, উন্নয়ন বোর্ড তৈরি করেছে সকল সুবিধা সম্বলিত রেস্টহাউজ। সড়ক ও জনপথ বিভাগের পুরনো একটি রেস্ট হাউজও রয়েছে এখানে।

চিম্বুকে পৌঁছেই স্থানীয় আদিবাসীদের হাতের তৈরি এক কাপ চা খেয়ে নিজেকে চাঙ্গা করে রওয়ানা দিতে পারেন নীলগিরির দিকে। অথবা এর একটু দূরেই সেনাবাহিনী পরিচালিত ক্যান্টিন রয়েছে। এখানে আপনি সেরে নিতে পারেন দুপুরের খাবার অথবা হালকা খাবার।

নীলগিরির সবচেয়ে মজার বিষয় হলো এখান থেকে চোখে পড়ে বান্দরবানের উপর দিয়ে বয়ে চলা সর্পিল সাঙ্গু নদী। এখান থেকে মনে হবে সাঙ্গু নদী আপনার খুব কাছে। সাঙ্গু নদীর অপরূপ সৌন্দর্য এখান থেকে উপভোগ করা যায়। সাঙ্গুর বুক চিরে বয়ে চলা ছোট ছোট নৌকাগুলোকে দেখলে দূর থেকে মনে হবে স্বপ্নের কোন ডিঙি বয়ে চলছে সাঙ্গু নদী দিয়ে।

কীভাবে যাবেন:
প্রতিদিন ঢাকা থেকে বিভিন্ন পরিবহন সার্ভিসের বাসে চড়ে সরাসরি বান্দরবান সদরে পৌঁছাতে পারবেন। বান্দরবান সদর থেকে চান্দের গাড়িতে চড়ে নীলগিরিতে যেতে পারেন। অথবা চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট থেকে পূরবী-পূর্বানী ননএসি এবং কদমতলি থেকে বিআরটি এসি বাস সার্ভিস চালু রয়েছে বান্দরবান। এছাড়াও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের কেরানীহাট স্টেশন থেকেও বান্দরবান-কেরানীহাট বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। যেভাবে খুশি সেভাবেই বান্দরবান যেতে পারেন। নীলগিরিসহ বান্দরবানের পর্যটন স্পটগুলো ঘুরে বেড়াতে ভাড়ায় চালিত বিভিন্ন রকমের গাড়ি পাওয়া যায়। তবে দু’একজনের জন্য জিপ, ল্যান্ড ক্রুজার, পাইপডোরসহ রিজার্ভ গাড়িগুলোর ভাড়া অনেকটা বেশি। তবে বিকল্প ব্যবস্থাও রয়েছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে এবং দলবেঁধে একসঙ্গে নীলগিরি ঘুরে বেড়াতে পারলে খরচ অনেকটা কম হয়। সিএনজি এবং মহেন্দ্র গাড়িতে করেও নীলগিরি যাওয়া যায়। এছাড়াও বান্দরবান-থানছি উপজেলা সড়কে চলাচলকারী যাত্রীবাহী বাস সার্ভিসগুলোতে করেও নীলগিরি যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। সেক্ষেত্রে সময় অপচয় হলেও খরচ কমবে।
বান শহরে অবস্থিত হোটেল ফোরস্টার। এখানে এসি এবং নন-এসি দু’রকমের রুম রয়েছে। হোটেলের প্রতিটি কক্ষে রয়েছে টেলিভিশন। বান্দরবান পৌর শহরে অবস্থিত হোটেল থ্রি স্টার। এখানে সপরিবারে রাত্রি যাপনের সু-ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এখানে রুম নয়, ফ্ল্যাট ভাড়া দেয়া হয়। প্রতিটি ফ্ল্যাটে ৮ থেকে ১৫ জন পর্যন্ত থাকার সুযোগ রয়েছে। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় রান্না করে খাওয়ার ব্যবস্থাও রাখা আছে এখানে।

No comments

Powered by Blogger.